গরুর রচনা [ Class 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7 - 10]
ছোটদের গরুর রচনা
ভূমিকাঃ সভ্যতার প্রাথমিক বিকাশের যুগ থেকে যে চতুষ্পদ প্রাণীটি গৃহপালিত পশু হিসাবে মানব সভ্যতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতম বন্ধনে আবদ্ধ সেটি হল গরু। আর্য্যসভ্যতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী হিসাবে গরু প্রতিপালন করা হত।
পরবর্তীকালেও মালবহন, কৃষিকাজ, এবং দুগ্ধ উৎপাদন ছাড়াও মাংসের প্রয়োজনে ব্যাপকভাবে গো-পালন করা হয়েছে। বর্তমান পৃথিবীতেও গ্রামীণ সমাজে ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত উদ্যোগে গরু প্রতিপালনের জনপ্রিয়তা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হিসাবে বিস্তারিত আলোচনার দাবী রাখে।
গরুর বৈশিষ্ট্যঃ গরু একটি চতুষ্পদ গবাদি পশু। চারটি ক্ষুরবিশিষ্ট পায়ের উপর এরা শরীরের ভার বহন করে। সারা শরীর ছোট লোমে ঢাকা এবং দুটি শিং বিশিষ্ট গরুর ওজন ও আকৃতি প্রজাতি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। পরিণত পুরুষ গরুকে ষাড় বলে, এদের ঘাড়ে চর্বি বিশিষ্ট একটি কুঁজ থাকে এবং এদের আকার বলশালী হয়।
গরুর একপাটি দাঁত থাকে যাতে দাঁতের সংখ্যা বত্রিশ। এদের পাকস্থলীতে চারটি ভিন্ন ভিন্ন প্রকোষ্ঠ থাকে এবং এরা দিনে ৪০ গ্যালন খাবার খেতে পারে। গরুর জলপান করার ক্ষমতা বিস্ময়কর। গরুর প্রায় ২৫০ টি স্বীকৃত প্রজাতি রয়েছে। কয়েকটি দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রজাতির নাম জার্সি, হলস্টেন, ফ্রিজিয়ার, আয়ারশার ইত্যাদি। বেশি মাংস হয় এমন প্রজাতির মধ্যে রয়েছে রেড হেয়ারফোর্ড, ব্ল্যাক হেয়ারফোর্ড, ব্রাহ্মমা ইত্যাদি। কতকগুলি প্রজাতি মালবহনে দক্ষ হয় যথা,হারিয়ানা,মালভি, জেবু ইত্যাদি।
গরু ২৪ ঘন্টায় মাত্র চারঘন্টা ঘুমিয়ে কাটায়, এরা ভাল সাঁতারু এবং প্রখর ঘ্রাণশক্তির অধিকারী।স্বাধীনভাবে থাকতে দিলে গরু সর্বদাই শরীরকে উত্তর দক্ষিণ অবস্থায় রাখে। এদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইট হয়।গরূ গিলে ফেলা খাবার পাকস্থলী থেকে মুখে এনে আবার চিবাতে পারে-একে জাবর কাটা বলে। গরু নিরীহ এবং প্রভুভক্ত হয়। গাভী তার বাছুরের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল হয়ে থাকে।
গরুর উপকারিতাঃ প্রাণী হিসাবে গরু থেকে আমরা পর্যাপ্ত দুধ এবং মাংস পেয়ে থাকি। তবে হিন্দু প্রভৃতি জাতি যারা গরুকে পবিত্র প্রাণী হিসাবে মর্যাদা দেয় তারা প্রধানতঃ দুধ ও চাষের প্রয়োজনে গো-পালন করে থাকে। দুধ থেকে ছানা, মাখন, পনীর এবং ঘি প্রস্তুত করা হয় এবং পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে তা গ্রহণ করা হয়।
ছানা, ঘি এবং ক্ষীর মিষ্টি ও নানারকম পিঠা তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। গরুর চামড়া চর্ম শিল্পে এবং বাদ্যযন্ত্র তৈরীতে মুল্যবান উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়। গরুর হাড়, শিং এবং ক্ষুরবিভিন্ন শিল্পদ্রব্যে উপাদান রূপে ব্যবহৃত হয়।
গরুর গোবর বায়োগ্যাস তৈরীর অন্যতম উপাদান এছাড়া গোবর এবং গো-মূত্রের কীটনাশক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। গোবর জৈবসার হিসাবেও ব্যবহার করা হয়। গরুর শরীরের প্রায় প্রতিটি উপাদানের মূল্য ও ব্যবহার রয়েছে। এর চর্বি সাবান এবং কিছু কিছু খাদ্য উপকরণে ব্যবহার করা হয়।
জেলেটিন, আঠা এবং বোতাম তৈরীর কাজে এর ক্ষুর এবং হাড়ের ব্যবহার আছে। সত্যি কথা বলতে কি এত বেশি উপযোগিতা অন্য কোন গৃহপালিত পশুর নেই এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে গো-পালনে বিশেষ কোন বাড়তি খরচও নেই, এই কারণে গরুকে অত্যন্ত মূল্যবান প্রাণি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে গো-পালন আর্থিক প্রকল্প হিসাবে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের উপায় হয়ে উঠেছে।
গো-পালনে সতর্কতাঃ যে কোন অন্য প্রাণির মতই গরুর অসুখ বিসুখ হয় এবং তার উপযুক্ত প্রতিকার বিষয়ে সচেতনতা আবশ্যক। জ্বর, কিটোসিস, লাম্পি স্কিন ডিজিজ, তড়কা রোগ যা আসলে অ্যানথ্রাক্স নামে পরিচিত প্রভৃতি রোগ দ্বারা গরু আক্রান্ত হতে পারে এবং যথাযথ চিকিৎসার অভাবে গরুর মৃত্যু হয়ে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। ফলে এই বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন।
উপসংহারঃ আদিকালের মত বর্তমানেও গরু মানব সভ্যতার অন্যতম সঙ্গী ও বাহক। পৃথিবীতে গরুর মোট সংখ্যা দেড়শো কোটির কাছাকাছি হলেও মানব সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে গরুর পালন ও প্রয়োজন ক্রমশঃ বাড়ছে। দেশ হিসাবে ভারতে গরুর সংখ্যা পর্যাপ্ত হলেও মাংসের প্রয়োজনে বে হিসাবী গো-হত্যা নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। একইভাবে প্রকৃতি ও গো-পালনের প্রয়োজনে তৃণভুমির প্রসারণ প্রয়োজন। এই দিকে উপযুক্ত দৃষ্টিপাত করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে এই গবাদি প্রজাতি বিপন্ন হয়ে মানুষের সংকট বর্ধিত করতে পারে।
গরু একটি গৃহপালিত পশু। গরুর চারটি পা, একটি লেজ, দুটি চোখ, দুটি শিং আছে। ল্যাজের সামনে এক গোছা চুল থাকে। গরু আমাদের দুধ দেয়। সেই দুধ থেকে ছানা, মাখন, পনীর এবং ঘি তৈরি করা হয়।