পদ কাকে বলে? পদ কয় প্রকার ও কি কি? তাদের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ উদাহরণ দাও।
পদ কাকে বলে?
শব্দ বা ধাতু বিভক্তি যুক্ত হয়ে বাক্যে স্থান লাভের যোগ্যতা পেলে, বিভক্তিযুক্ত সেই শব্দ বা ধাতুকে পদ বলে, প্রতিটি পদ ই বাকের এক একটি অঙ্গ।
পদ কয় প্রকার ও কী কী?
পদের প্রকারভেদ: পদ সাধারণত দুই প্রকার :-
- নাম পদ
- ক্রিয়াপদ
এই নাম পদ আবার চারটি ভাগে বিভক্ত - বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ ও অব্যয়। অতএব পদ পাঁচ প্রকার - বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষন, অব্যয় ও ক্রিয়া।
পদের প্রকার গুলির সংজ্ঞা, প্রকার, উদাহরণ আলোচনা।
বিশেষ্য পদ কাকে বলে? কয় প্রকার ও কী কী?
যে শব্দ দ্বারা কোন ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, জাতি, গুন, ধর্ম, অবস্থা, কার্য, সমষ্টি ইত্যাদির নাম বুঝায় তাকে বিশেষ্য পদ বলে।
উদাহরণ : রবীন্দ্রনাথ হলেন বিশ্ব কবি। রবীন্দ্রনাথ বিশেষ্য পদ।
বিশেষ্য পদের শ্রেণীবিভাগ গুলো নিম্নরূপ:
১. সংজ্ঞা বাচক বিশেষ্য কাকে বলে? উদাহরণ দাও
কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি, স্থান, দেশ, নদী, পর্বত, সমুদ্র গ্রন্থ, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির নাম বোঝায়। উদাহরণ: বঙ্কিমচন্দ্র ( ব্যক্তি ) বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট সাহিত্যিক।
২. জাতিবাচক বিশেষ্য বলতে কী বোঝ?
এক ধর্ম বিশিষ্ট সকল ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীকে বোঝায়। উদাহরণ - সবার উপরে (মানুষ) সত্য। তেমনি- পশুপাখি, কীট পতঙ্গ, গরু, বৃক্ষ, লতা, হিন্দু, মুসলমান ইত্যাদি।
৩. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য:
জাতিবাচক বিশেষ্যের সমষ্টি কে বোঝায়। উদাহরণ - এই দলটির জয়ের সম্ভাবনা খুব বেশি। দলটি হল সমষ্টিবাচক বিশেষ্য। এরকম - সভা, সংঘ, সমিতি, গোষ্ঠী বাহিনী ইত্যাদি রয়েছে।
৪. বস্তুবাচক বিশেষ্য:
কোন বস্তুর নাম বোঝায় উদাহরণ আমাকে এক কেজি চিনি দেন । এমনই কয়েকটি উদাহরণ হল - সোনা, রুপা, আকাশ, বাতাস, টাকা, পয়সা ইত্যাদি।
৫. ক্রিয়া বাচক বিশেষ্য:
কোন কাজের নাম বোঝায়। উদাহরণ - অতি ভোজন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এছাড়াও রয়েছে যেমন - গমন, চলন, লেখা, পড়া, মরণ, বাচন, ঘুম ইত্যাদি।
৬. সংখ্যা বাচক বিশেষ্য:
সংখ্যা বাচক শব্দগুলো বিশেষ্য রূপে বসলে সে ক্ষেত্রে তাকে সংখ্যা বাচক বিশেষ্য বলে। উদাহরণ -দশে মিলে করি কাজ ।এখানে দশ পদটি হল সংখ্যা বাচক বিশেষ্য পদ।৭. গুণবাচক বিশেষ্য:
কোন প্রাণী বা বস্তুর গুন ধর্ম বা প্রকৃতি বোঝায়। উদাহরণ - ছেলেটির প্রতিভা আছে। এখানে প্রতিভা হল গুণবাচক বিশেষ্য। তেমনি - বুদ্ধি, ক্ষমা, স্নেহ, মমতা, হিংসা, পাপ, পুণ্য ইত্যাদি পদ হল গুনবাচক বিশেষ্য পদ।

৮. অবস্থা বাচক বিশেষ্য:
কোন প্রাণীর বা বস্তুর অবস্থা বোঝায়। উদাহরণ - আমাদের শৈশব বড়ো স্বপ্নময় ছিল। এখানে শৈশব পদটি হল অবস্থাবাচক বিশেষ্য পদ। এরকম - দৈন্য, যৌবন, দুরবস্থা, যন্ত্রণা, কষ্ট ইত্যাদি হলো অবস্থা বাচক বিশেষ্য পদের উদাহরণ।
৯. ভাববাচক বিশেষ্য:
প্রাণীর মনের কোন বিশেষ ভাব বোঝায়। উদাহরণ - কথাটা শুনে আমার কি যে আনন্দ হচ্ছে। আনন্দ পদটি ভাববাচক বিশেষ্য পদ। এরকম বেদনা, উল্লাস, উন্মাদনা, ক্রোধ ইত্যাদি হলো ভাববাচক বিশেষ্য পদের উদাহরণ।
বিশেষণ পদ কাকে বলে? বিশেষণ পদের শ্রেণীবিভাগ
যে পথ বিশেষ্যের গুণ ধর্ম অবস্থা পরিমাণ সংখ্যা ইত্যাদি জানান দেয় সেই পদকে বিশেষণ পদ বলে। বিশেষণ পদ যে পদটিকে বিশেষিত করে সাধারণত তার পূর্বে বসে থাকে। উদাহরণ- বিনয়ী ছাত্রকে সব শিক্ষক কি ভালোবাসেন। এখানে বিনয়ী হলো বিশেষণ পদ।
বিশেষণ পদের শ্রেণীবিভাগ: বিশেষণ পদ সাধারণত দুই প্রকার- ১. নাম বিশেষণ। ২. ক্রিয়া বিশেষণ।
নাম বিশেষণ:
১. নাম বিশেষণ পদ কে চার ভাগে ভাগ করা যায় -
- ১. বিশেষ্যের বিশেষণ।
- ২. সর্বনামের বিশেষণ।
- ৩. বিশেষণের বিশেষণ।
- ৪. অব্যয়ের বিশেষণ।
১. বিশেষ্যের বিশেষণ পদ কে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায় :- ক) পদের প্রকৃতি অনুসারে। খ) পদের গঠন অনুসারে।
- ক) পদের প্রকৃতি অনুসারে নাম বিশেষণ পদের শ্রেণীবিভাগ:
১. গুণবাচক বিশেষণ: কোমল হাসি ।ভদ্র লোক। বাজে খবর।
২. অবস্থা বাচক বিশেষণ :চলন্ত ট্রেন।ঠান্ডা জল।গরম ভাত। পাকা আম।
৩. সংখ্যা বাচক বিশেষণ: বারো মাস। পাঁচ সন্তান।
৪. পূরণবাচক বিশেষণ: দ্বাদশ মাস। পঞ্চম সন্তান।
৫. পরিমাণ বাচক বিশেষণ: অল্প আহার, ৫ বিঘা জমি।
৬. উপাদান বাচক বিশেষণ: পাথুরে জমি।মেটে বাড়ি।
৭. বর্ণ বাচক বিশেষণ: লাল ফিতে। সাদা টুপি।
৮. সংজ্ঞা বাচক বিশেষণ: ঢাকাই মসলিন। বিশেষ্য পদের পরে তদ্ধিত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে তৈরি হয়।
৯. প্রশ্ন বাচক বিশেষণ: কোন বইটা চাও তুমি?
১০. সর্বনামীয় বিশেষণ: মোদীয়(আমার )ভবন।
১১. অব্যয়জাত বিশেষণ: আচমকা চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আচমকা শব্দটি নিজের অব্যয় কিন্তু বিশেষণের কাজ করে।
১২. সম্বন্ধ বিশেষণ: শীতের হাওয়া। - ২. পদের গঠন অনুসারে বিশেষের বিশেষণ পদের শ্রেণীবিভাগ:
১. একপদী বিশেষণ: একটাই পথ নিয়ে গঠিত। শহুরে জীবন।
২. বহুপদী বিশেষণ: একাধিক পদে গঠিত। রাত জাগা পাখি।
৩. বাক্যাশ্রয়ী বিশেষণ: যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতা।
৪. ধনাত্মক বিশেষণ: ফুরফুরে হাওয়া।
৫. শব্দ দ্বৈতাশ্রয়ী: হাসি হাসি মুখ।
৬. পদান্তরিত বিশেষণ: ধাতু বা শব্দ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বিশেষণে রূপান্তরিত হয়।
২. সর্বনামের বিশেষণ: আমি বোকা।
৩. বিশেষণের বিশেষণ: আমি খুবই বোকা।
৪. অব্যয়ের বিশেষণ: খুবই আচমকা চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
ক্রিয়া বিশেষণ:
ক্রিয়া বিশেষণ তিন প্রকার: অবস্থাবাচক, কালবাচক, স্থান বাচক।
- ১. অবস্থা বাচক বিশেষণ: চমৎকার মানিয়েছে তোমাকে।
- ২. কাল বাচক বিশেষণ: স্কুলে আসা মাত্র ঘণ্টা পড়ল।
- ৩. স্থান বাচক বিশেষণ: পিছনে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
সর্বনাম পদ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি
পূর্বে উল্লিখিত কোন বিশেষ্য পদের পুনরুল্লেখ না করিয়া তাহার পরিবর্তে যে পদ ব্যবহার করা হয় তাকে সর্বনাম পদ বলে । যেমন- আমি, তুমি, তাহারা, উনি, কে, সে, আপনি ইত্যাদি।
সর্বনাম পদের শ্রেণীবিভাগগুলো আলোচনা করো:
১. ব্যক্তিবাচক সর্বনাম: যে সর্বনামে কোন ব্যক্তিকে বুঝায় তাহা ব্যক্তিবাচক সর্বনাম। উদাহরণ: আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের, আপনি, সে ইত্যাদি।
২. নির্দেশক সর্বনাম: যে সর্বনাম কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করে তাকে নির্দেশক সর্বনাম বলে। উদাহরণ: এ, এরা, ইহা, ইহারা, ইনি, এটা ইত্যাদি।
৩. অনির্দেশক সর্বনাম: যে সর্বনাম কোন অনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তু যা ভাবের পরিবর্তে বসে তাকে অনির্দেশক সর্বনাম বলে। উদাহরণ : কেহ, কেউ, কিছু, কেউ, অমুক ইত্যাদি।
৪. প্রশ্ন বাচক সর্বনাম: যে সর্বনাম পদে কোন কিছু জানবার ইচ্ছা থাকে তাকে প্রশ্ন বাচক সর্বনাম বলে। উদাহরণ: আপনারা কি খেলেন?
৫. আত্ম বাচক সর্বনাম: যে সর্বনামে কাহারো সাহায্য না নেওয়ার ভাবটি বিশেষ জোরের সঙ্গে বুঝানো হয়, তাকে আত্ম বাচক সর্বনাম বলে। যেমন - নিজে, আপনি, আপনারা ইত্যাদি।
৬. সংযোগ বাচক সর্বনাম: যে সর্বনাম পদে দুই বা তাহার বেশি ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে সংযোগ বুঝায় তাকে সংযোগবাচক সর্বনাম বলে। যেমন -যাহা, যাহারা, যে, যা ইত্যাদি।
৭. সাকল্যবাচক সর্বনাম: যে সর্বনাম পদ সমষ্টিবাচক ব্যাক্তি, বস্তু বা ভাবের পরিবর্তে প্রয়োগ করা হয়, তাকে সাকল্যবাচক সর্বনাম বলে। যেমন -সর্ব, সব, সকল, সবাই ইত্যাদি।
৮. অন্যাদি বাচক সর্বনাম: অন্য ,অপর ,অমুক প্রভৃতি কয়েকটি কে অন্যাদি বাচক সর্বনাম বলে। যেমন- স্বয়ং, আপনা- আপনি প্রভৃতি।
৯. পারস্পরিক বা ব্যতিহার সর্বনাম: পরস্পরের মধ্যে সম্পর্কযুক্ত অর্থ বুঝায়। যেমন-তারা পরস্পরকে ভালোবাসে।
অব্যয় পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও
সকল লিঙ্গ, বচন, পুরুষ ও বিভক্তিতে যে পদ একই রূপে থাকে কোন অবস্থাতেও যাহার কোনরূপ পরিবর্তন হয় না ,তার নাম অব্যয় পদ। উদাহরণ: আপনি তো বলেই খালাস ,কিন্তু ঠেলা সামলাবে কে? এখানে কিন্তু এবং তো হলো অব্যয় পদ।
অব্যয় পদের শ্রেণীবিভাগ: বাংলা অব্যয়ের প্রধান কাজ পদের সহিত পদের বা বাক্যের সহিত বাক্যের সংযোগ স্থাপন করা। বাংলায় ব্যবহৃত অব্যয় গুলিকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- ১. পদান্বয়ী অব্যয়।
- ২. সমুচ্চয়ী অব্যয়।
- ৩.অনন্বয়ী অব্যয়।
- ৪. ধন্যাত্মক অব্যয়।
১. পদান্বয়ী অব্যয়:
যে অব্যয় বাক্য মধ্যস্থ এক পদের সঙ্গে অন্য পদের সম্বন্ধ দেখায় তাহাকে পদান্বয়ী অব্যয় পদ বলে। এই শ্রেণির অব্যয়ের পূর্বস্থিত পদে প্রায়ই বিভক্তি চিহ্ন প্রয়োগ হয়। এই অব্যয়ের কতগুলি-
- ১. অবস্থান বাচক: সঙ্গে সহিত, পশ্চাতে, পিছে, সম্মুখে, আগে ,ভিতরে ,বামে ইত্যাদি।
- ২. উপমা বাচক: মত ,ন্যায় , সম, প্রায় ইত্যাদি।
- ৩. সীমাবাচক: পর্যন্ত ,থেকে ,অবধি ইত্যাদি।
- ৪. ব্যতিরেকাত্মক: বিনা ,বিনে ,ব্যতীত, ভিন্ন, বাদে ইত্যাদি।
- ৫. অনুসর্গ রূপে: নিমিত্ত, জন্য, উদ্দেশ্যে ইত্যাদি।
২.সমুচ্চয়ী অব্যয়:
যে অব্যয় একাধিক পদের বা বাক্যের সংযোগ বিয়োগ সংকোচন প্রভৃতি সাধন করে তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে। সমুচ্চয়ী অব্যয়কে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
- ক) সংযোজক অব্যয়: দুই বা তার বেশি পদ বা বাক্যকে সংযুক্ত করে। যেমন- আকাশ ও সাগর দুই ভাই।
- খ) বিয়োজক অব্যয়: দুই বা তার বেশি বিষয়ের মধ্যে একটা নির্বাচন বোঝায়। যেমন- আকাশ অথবা সাগর এ কাজটা করবে।
- গ) ব্যতিরেকাত্মক অব্যয়: অভাব বা ভেদ অর্থ প্রকাশ করে। যেমন- সত্য বল ,নতুবা শাস্তি পাবে।
- ঘ) সংকোচক অব্যয়: স্বাভাবিক ফল না বুঝিয়ে বিপরীত ফল বোঝায়। যেমন -আকাশ ভালো পড়াশোনা করেছে অথচ পরীক্ষা ভালো হয়নি।
- ঙ) হেতুবাচক: হেতু বোঝায়। যেমন- আকাশ স্কুলে যেতে পারেনি ,কারণ ও অসুস্থ ছিল।
- চ) সিদ্ধান্তসূচক: সিদ্ধান্ত বোঝায় ।যেমন -আকাশ অসুস্থ ছিল, তাই সে স্কুলে যেতে পারেনি।
- ছ) সংশয় সূচক: লোকটা বুঝি গোয়েন্দা?
- জ) নিত্য সম্বন্ধী অব্যয়: দুটো অব্যয় একটার সাপেক্ষে অন্যটা ব্যবহৃত হয়। যেমন আপনি যদি বলেন ,তবে সেখানে যাব।
৩.অনন্বয়ী অব্যয়:
যে অব্যয়ের সহিত বাক্যে অন্য কোন পদের ব্যাকরণগত কোনো সম্বন্ধ নাই তাকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। এই অব্যয়টি চারটি ভাগে বিভক্ত:-
- ১. ভাবপ্রকাশক: ক) অনুমোদন -প্রশংসা -হর্ষ -জ্ঞাপক: শাবাশ, ধন্য ধন্য। খ) বিস্ময় ব্যাপক: একি?, ওমা! গ) ভয় -দুঃখ -যন্ত্রণা- প্রকাশক: হায় হায়, আহা আহা। ঘ) ঘৃণা ও বিরক্তি সূচক: দূর হ ,দূর ছাই। ঙ) শোক-খেদ -বিস্মরণ -সূচক: আহা রে! চ) সম্মতি বা অসম্মতি জ্ঞাপক: হুঁ,না।
- ২. সম্বোধন সূচক: যে অব্যয়ের দ্বারা কাউকে সম্বোধন করা বোঝায়। যেমন -হে বন্ধু ,আজ তবে আসি।
- ৩. প্রশ্নসূচক: প্রশ্ন করার ভাব বোঝায় ।যেমন- আজ স্কুলে যাচ্ছ না কেন?
- ৪. বাক্যালংকার অব্যয়: বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। যেমন -এ তো মেয়ে মেয়ে নয়।
৪. ধ্বন্যাত্মক অব্যয়:
ধ্বন্যাত্মক পদ। বাস্তব ধ্বনির ব্যঞ্জনা দেয় বা অনুভূতি গ্রাহ্য কোন সূক্ষ্ম ভাব বা অবস্থার দ্যোতনা দেয়। এই অব্যয় দুই প্রকার:-
১. অনুকার ধন্যাত্মক: বাস্তব ধ্বনির অনুকরণে জাত ও শ্রুতিগ্রাহ্য। যেমন- থালা বাজে ঝনঝন।
২. ভাব প্রকাশক ধ্বন্যাত্মক: সূক্ষ্ম অনুভূতিগ্রাহ্য ভাব বা অবস্থার দ্যোতনা দেয়। যেমন- ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ক্রিয়াপদ কাকে বলে ও কয় প্রকার?
বাক্যের অন্তর্গত যে পদের দ্বারা বিশেষ্যের যাওয়া, আসা, করা ,থাকা, খাওয়া ইত্যাদি কোন কাজ করা বুঝায় সেই পথকে ক্রিয়াপদ বলে। ক্রিয়ার প্রকারভেদ:
১. সমাপিকা-অসমাপিকা ক্রিয়া:
বাক্যের অবস্থা, অর্থ ,ভাব প্রকাশের উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াপদকে এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
ক) সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়াপদ বাক্যের অর্থ বা ভাবে পরিসমাপ্তি ঘটায় তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন- রাম বই পড়ছে।
খ) অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যে অর্থ বা ভাবে পরিসমাপ্তি ঘটে না তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন- রাম বই পড়ে...
২.অকর্মক-সকর্মক-দ্বিকর্মক ক্রিয়া:
বাক্যে অন্য পদের সঙ্গে সম্পর্কের বিচারে বা অন্বয়গত দিক থেকে বা ক্রিয়ার কর্মের উপর ভিত্তি করে ক্রিয়া পদকে অকর্মক, সকর্মক ও দ্বিকর্মক এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
১.অকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়া পদে কোন কর্ম নেই তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন -শিশুটি ঘুমিয়েছে।
২. সকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়া পদের কর্মপদ আছে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন - রাহুল বই পড়ে ।এখানে বই কর্ম পদ, পড়ছে ক্রিয়াটি সকর্মক ক্রিয়া।
৩. দ্বিকর্মক ক্রিয়া: কখনো কখনো একটি বাক্যে একই ক্রিয়াপদের দুটি কর্ম থাকে তখন সেই ক্রিয়া পদ কে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে । যেমন - বাবা আমাকে একটি ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন। এখানে কিনে দিয়েছেন ক্রিয়া পদের দুটি কর্ম-আমাকে ও ল্যাপটপ।
৩. উৎপত্তি তথা গঠনগত দিক থেকে ক্রিয়া পদকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় ।
- ১.মৌলিক ক্রিয়া ।
- ২.প্রযোজক ক্রিয়া।
- ৩. নাম ধাতুজ ক্রিয়া।
- ৪. সংযোগ মূলক ক্রিয়া।
- ৫. যৌগিক ক্রিয়া।
১. মৌলিক ক্রিয়া: মৌলিক ধাতুর উত্তরে সরাসরি ধাতু বিভক্তি যোগ করে যে ক্রিয়া পদটি গঠিত হয় তাকে মৌলিক ক্রিয়া বলে। যেমন - সে গানটি গাইল। গা+ইল=গাইল।
২. প্রযোজক ক্রিয়া: প্রযোজক ধাতুর উত্তরে ধাতু বিভক্তি যোগ করে গঠিত যে ক্রিয়ার দ্বারা অন্যকে দিয়ে কাজ করানো বোঝায় তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। যেমন-মা শিশুকে চাঁদ দেখাইবে। দেখা (প্রযোজক ধাতু)+ইবে (ধাতু বিভক্তি )=দেখাইবে (প্রযোজক ক্রিয়া)।
৩. সংযোগ মূলক ক্রিয়া: বিশেষ্য বিশেষণ বা ধন্যাত্মক অব্যয়ের পর মৌলিক ধাতু যোগে গঠিত সংযোগ মূলক ধাতুর উত্তরে ধাতু বিভক্তি যুক্ত করে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয় তাকে সংযোগ মূলক ক্রিয়া বলে। যেমন - গাড়িটি ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা মারিল। ধাক্কা মার (সংযোগমূলক ধাতু)+ইল(ধাতু বিভক্তি)=ধাক্কা মারিল(সংযোগ মূলক ক্রিয়া)।
৪. যৌগিক ক্রিয়া: ইয়া বা ইতে বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার পর মৌলিক ধাতু যোগে গঠিত যৌগিক ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া বিভক্তি যুক্ত করে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয় তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন-আমি সেইখানে বসিয়া করিলাম। বসিয়া পড়্ (যৌগিক ধাতু)+ইলাম (ধাতু বিভক্তি)=বসিয়া পড়িলাম(যৌগিক ক্রিয়া)।
উপরে উল্লেখিত ভাগ গুলি ছাড়াও আরো কয়েকটি ক্রিয়ার নাম জানা যায় এগুলো হল:-
কর্মবাচ্যের ক্রিয়া: কর্মবাচ্যের ধাতুর উত্তরে ধাতু বিভক্তি যুগের এই ক্রিয়া গঠিত হয় যেমন কথাটা কি ভালো শুনাইতেছে? শুনা (কর্মবাচ্যের ধাতু) + ইতেছে। (ধাতু বিভক্তি)=শুনাইতেছে (কর্মবাচ্যের ক্রিয়া)।
ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া: ধ্বন্যাত্মক ধাতুর উত্তরে ধাতু বিভক্তি যোগ করে এই ক্রিয়া গঠিত হয়।যেমন -ঠান্ডায় দাঁত কনকনাইতেছে। কনকনা (ধ্বন্যাত্মক ধাতু)+ইতেছে(ধাতু বিভক্তি)=কনকনাইতেছে (ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া)।
বিভিন্ন পদ চেনার সহজ উপায়:
পদ কথার অর্থ হল বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ বা ধাতু। বাক্যে ব্যবহারের আগে কোন ধ্বনি গুচ্ছকেই পদ বলা যায় না। কোনটি কি পদ তা চিনতে অনেকেই সমস্যায় পড়েন । এই নিয়মগুলো ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে পদ সহজেই চেনা যাবে।
বিশেষ্য পদ চেনার উপায়:
মনে রাখতে হবে বিশেষ্য ও সর্বনাম আলাদা পদ নয় এ দুটি কার্যত একই জিনিস। বিশেষের পরিবর্তে সর্বনাম ব্যবহার করা হয়।
- ১. যেকোনো নাম অবশ্যই বিশেষ্য হবে।
- ২. যা আমরা পাঁচটি ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করতে পারি তা বিশেষ্য হবে।
- ৩. যে পদকে বাক্যের উদ্দেশ্যে রূপে ব্যবহার করা যাবে সেটি বিশেষ্য বা সর্বনাম হবে ।সর্বনাম চেনা সহজ। সর্বনাম না হলে অবশ্যই বিশেষ্য হবে।
- ৪. যে পদকে বাক্যে কোন না কোন কারক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে সেটি অবশ্যই বিশেষ্য অথবা সর্বনাম পদ হবে।
- ৫.'তা ' বা 'ত্বা' প্রত্যয় যোগে যত পদ গঠিত হয়, যেমন - সততা ,সরলতা ,ভীরুতা ,ঘনত্ব এগুলি সবই বিশেষ্য।
- ৬. বিশেষ্য পদের সাথে একটি ক্রিয়াপদ যোগ করে বাক্য গঠন করা যাবে।
- ৭. বাস্তবে বা কল্পনায় যার অস্তিত্ব আছে তা বিশেষ্য হবে।
বিশেষণ পদ চেনার উপায়:
- ১. বিশেষণ পদ একা একা কিছু করতে পারে না। অন্য পদের দোষ ,গুণ ,অবস্থা ,সংখ্যা ইত্যাদি বোঝায় । বিশেষণ তাই বাক্যের উদ্দেশ্য হতে পারে না।
- ২. বিশেষণ পদ কারক হতে পারে না।
- ৩. বিশেষণ পদে শূন্য বিভক্তি ছাড়া অন্য বিভক্তি যুক্ত হতে পারেনা ।তবে বিশেষ্য পদের সাথে বিভক্তি যুক্ত হয়ে বিশেষণ পদ গঠিত হতে পারে।
- ৪. কেমন ,কত ,কিভাবে ,কি জাতীয় ,কততম ইত্যাদি প্রশ্নের জবাবে বিশেষণ পাওয়া যায়।
- ৫.ক্ত প্রত্যয়জাত পদগুলি সাধারণত বিশেষণ।
অব্যয় পদ চেনার উপায়:
- ১. উপরের কোন পদ না হলে সেটি অব্যয় হবে।
- ২. সংযোগ ,বিয়োগ, বিকল্প ,তুলনা ,আবেগ, মনোভাব ,পদে পদে ও বাক্যে বাক্যে সম্পর্ক স্থাপন। ইত্যাদি কাজ করলে সেটি অব্যয় পদ হবে।
- ৩. সমস্ত উপসর্গ ও অনুসর্গ অব্যয় পদের অন্তর্ভুক্ত।
- ৪. কিছু কিছু অব্যয় পদে বিভক্তিযুক্ত থাকতে দেখা যায়। কিন্তু অব্যয় পদের বিভক্তি ইচ্ছেমতো বদলানো যায় না ।হয় শূন্য বিভক্তি থাকে নতুবা একটি নির্দিষ্ট বিভক্তি থাকে।
ক্রিয়া পদ চেনার উপায়:
কাজ বুঝালে ক্রিয়া হয় না। কাজ করা বা হওয়া বোঝালেই ক্রিয়া হয়। যেমন- 'খাওয়া' একটি কাজ কিন্তু 'খাই', 'খাবো', 'খাচ্ছে' ক্রিয়াপদ।
১. সমস্ত ক্রিয়া পদকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় :সমাপিকা ও অসমাপিকা । দেখতে হবে পদটি এই দুটি ভাগের কোন একটিতে পড়ছে কিনা।
২. সমাপিকা ক্রিয়া হলে তার একটি কাল থাকবে ।অর্থাৎ সমাপিকা ক্রিয়ার সাথে অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ যেকোনো একটি কালের যোগ থাকবে ।যেমন : দেখেছি, দেখি ,দেখছি, দেখো ,দেখছো ,দেখেন, দেখছিস প্রভৃতি পদ বর্তমান কালের সাথে যুক্ত তাই এগুলি সমাপিকা ক্রিয়া।
৩. ধাতুর সাথে 'ইয়া', 'ইতে', 'ইলে' প্রত্যয় যোগে অসমাপিকা ক্রিয়া তৈরি হয় ।বাংলায় এই তিনটি সমাপিকা ক্রিয়ার ধরন আছে। এর বাইরে আর নেই।
উত্তর:- যে পদ দ্বারা বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা,পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে।