সংখ্যা কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? | মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যার উদাহরণ দাও
সংজ্ঞা: সংখ্যা কাকে বলে? জানতে গেলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে অংক কি। হিসাব নিকাশ বা গণনার কাজে যে সকল প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহৃত হয়, তাকে অংক বলা হয়।
গণিতে মোট অংক দশটি। যথা :- ০,১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯। সার্থক অংক হল নয়টি। ১ থেকে ৯ পর্যন্ত। সংখ্যার অভাব জ্ঞাপক/সাহায্যকারী অংক=০।
সংখ্যা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
সংখ্যার সংজ্ঞা হিসেবে আমরা বলতে পারি - এক বা একাধিক অংক যুক্ত হয়ে সংখ্যা গঠন করে। তাই কোন কিছু পরিমাণ প্রকাশক চিহ্নকে আমরা সংখ্যা বলি।
উদাহরণ:- ১০,৫০,৩০,২০০ ইত্যাদি। এই সংখ্যাগুলির মধ্যে এক অঙ্কের সংখ্যা, দুই অঙ্কের সংখ্যা, তিন অঙ্কের সংখ্যা, চার অঙ্কের সংখ্যা - এইভাবে ক্রমবর্ধমান সংখ্যাগুলি প্রকাশ করা যায়।
সংখ্যা কত প্রকার ও কি কি?
সংখ্যার প্রকারভেদ:- সংখ্যাকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ১) অবাস্তব সংখ্যা এবং ২) বাস্তব সংখ্যা।
অবাস্তব সংখ্যা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
১) অবাস্তব সংখ্যা: বাস্তবে যে সংখ্যার কোন ব্যবহারই প্রয়োগ নেই তাকে অবাস্তব বা জটিল সংখ্যা বলে। উদাহরণ:- বাস্তব সংখ্যা + কাল্পনিক সংখ্যা = অবাস্তব সংখ্যা। ৩+৪j - অবাস্তব সংখ্যা।
বাস্তব সংখ্যা কাকে বলে? কয় প্রকার ও কি কি?
২) বাস্তব সংখ্যা:- যে সংখ্যাগুলি নিয়ে আমরা বাস্তবে কাজ করে থাকি সেগুলি বাস্তব সংখ্যা। অর্থাৎ সংখ্যারেখায় উপস্থাপনযোগ্য সকল সংখ্যাকে বাস্তব সংখ্যা বলা হয়। শূন্যসহ ধ্বনাত্বক, ঋনাত্বক, পূর্ণসংখ্যা, ভগ্নাংশ সংখ্যা সবই বাস্তব সংখ্যা। বাস্তব সংখ্যাকে R দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
বাস্তব সংখ্যাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ১) অমূলদ সংখ্যা এবং ২) মূলদ সংখ্যা।
অমূলদ সংখ্যা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
১) অমূলদ সংখ্যা:- যে সংখ্যাগুলো ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশ করা যায় না। আবার পূর্ণবর্গ কোন সংখ্যা মূলদ সংখ্যা হবে না। উদাহরণ:-√২,√৫।
মূলদ সংখ্যা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
২) মূলদ সংখ্যা:- যে সংখ্যাগুলিকে p/q অর্থাৎ ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশ করা যায়। যেমন - p ও q উভয়ই পূর্ণ সংখ্যা। 'p' - এর মান কখনোই '০' হতে পারে না। মূলদ সংখ্যা এক ধরনের বাস্তব সংখ্যা। অর্থাৎ যে সকল বাস্তব সংখ্যাকে ভগ্নাংশ দ্বারা প্রকাশ করা যায় তাহাই মূলদ সংখ্যা। উদাহরণ :- ১/৩, ১১/১৪।
মূলদ সংখ্যার প্রকারভেদ: মূলদ সংখ্যা আবার দুই প্রকার - ১) পূর্ণ সংখ্যা (অখণ্ড সংখ্যা) এবং ২) ভগ্নাংশ সংখ্যা।
১) পূর্ণ সংখ্যা (Integer Number): শূন্য সহ সকল ধনাত্মক ও ঋণাত্মক অখণ্ড সংখ্যাকে পূর্ণ সংখ্যা বলা হয়। অর্থাৎ পূর্ণ সংখ্যা দুই প্রকার -
- ১)ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা : ১,২,৩,৪,৫,৬,৭।
- ২)ঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যা: -১,-২,-৩,-৪,-৫,-৬ ইত্যাদি।
'০' এবং ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যাকে এক সঙ্গে বলা হয় অঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যা।
মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব স্বাভাবিক সংখ্যা এক এবং সেই স্বাভাবিক সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য হলে ও অন্য কোন স্বাভাবিক সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য নয় তাদের মৌলিক সংখ্যা বলে । যেমন- ১,২,৩,৫,৭,১১,১৩ ইত্যাদি।
যৌগিক সংখ্যা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব স্বাভাবিক সংখ্যা এক এবং সেই স্বাভাবিক সংখ্যা ছাড়া ও অন্য কোন স্বাভাবিক সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য তাদের যৌগিক সংখ্যা বলে। যেমন- ৪,৬,৮,৯,১০,১২,১৪ ইত্যাদি।
জোড় সংখ্যা কাকে বলে? উদাহরণ দাও!
যেসব স্বাভাবিক সংখ্যা ২ দ্বারা বিভাজ্য তাদের জোড় সংখ্যা বলে। যেমন-২,৪,৬,৮,১০ ইত্যাদি।
বিজোড় সংখ্যা কাকে বলে? উদাহরণ দাও!
যেসব স্বাভাবিক সংখ্যা ২ দ্বারা বিভাজ্য নয়, তাদের বিজোড় সংখ্যা বলে। যেমন- ১,৩,৫,৭,৯,১১ ইত্যাদি।
সহমৌলিক সংখ্যা কাকে বলে? উদাহরণ দাও!
দুইটি সংখ্যার মধ্যে যদি ১ ব্যতীত আর কোন সাধারণ গুণনীয়ক না থাকে তাহলে তাদেরকে পরস্পরের সহ মৌলিক বলা হয়। উদাহরণ - ৩ আর ৭ এদের মধ্যে ১ ছাড়া আর কোন সাধারণ উৎপাদক নেই তাই ৩ ও ৭ একে অপরের সহমৌলিক সংখ্যা।
ভগ্নাংশ সংখ্যা কাকে বলে? কয় প্রকার ও কী কী
লব ও হর বিশিষ্ট গাণিতিক রাশি কে ভগ্নাংশ বলে। ভগ্নাংশের উপরের অংশকে বলে লব ও নিচের অংশকে বলে হর। উদাহরণ- ৫/৩,৭/৯,১/৩ ইত্যাদি।
ভগ্নাংশ সাধারণত দুই প্রকার :- ১)সাধারণ ভগ্নাংশ ও ২)দশমিক ভগ্নাংশ ।
সাধারণ ভগ্নাংশ কাকে বলে? কত প্রকার ও কী কী?
কোন বস্তুকে নির্দিষ্টভাবে বিভক্ত করে তাকে হর দ্বারা এবং নির্দিষ্ট অংশ হতে গৃহীত অংশকে লব দ্বারা চিহ্নিত করে গাণিতিক ভাবে প্রকাশ করলে তাকে সাধারণ ভগ্নাংশ বলে। উদাহরণ:- ৪/৫ ,৬/৭,৮/৫।
সাধারণ ভগ্নাংশকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় :-
- ক) প্রকৃত ভগ্নাংশ: যে ভগ্নাংশের লব ছোট ও হর বড় তাকে প্রকৃত ভগ্নাংশ বলে । উদাহরণ:- ২/৫, ১/৩।
- খ) অপ্রকৃত ভগ্নাংশ : যে ভগ্নাংশের লব বড় ও হর ছোট তাকে অপ্রকৃত ভগ্নাংশ বলে। উদাহরণ : ৫/২, ৭/৩, ৮/৫.
- গ) মিশ্র ভগ্নাংশ :- পূর্ণ সংখ্যার সাথে প্রকৃত ভগ্নাংশ যুক্ত থাকলে তাকে মিশ্র ভগ্নাংশ বলে। উদাহরণ :- ২ পূর্ণ ২/৫, ৪ পূর্ণ ১/৩
সাধারণ ভগ্নাংশে পরিণত : মিশ্র ভগ্নাংশকে সাধারণ ভগ্নাংশে পরিণত করতে হলে, এভাবে করতে হবে: হর ও লবের গুণ করে লবের সঙ্গে যোগ করতে হবে। যেমন- ২ পূর্ণ ২/৫=১২/৫। - ঘ) অন্যোন্যক ভগ্নাংশ:- দুটি সংখ্যার গুণফল ১ হলে একটি সংখ্যা অপরটির অন্যোন্যক হবে। উদাহরণ:-যে সংখ্যাটি থাকবে হর ও লবে ঠিক তার উল্টো হবে। যেমন - ৪/৫ = ৫/৪.
দশমিক ভগ্নাংশ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর :- যে ভগ্নাংশকে দশমিক চিহ্নের (.) সাহায্যে প্রকাশ করা হয় তাকে দশমিক ভগ্নাংশ বলে। উদাহরণ - ২.৫ ,৭.৪,৬.৮।
০,১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯ এই দশটিকে অঙ্ক বলা হয়। আর এই দশ অঙ্ক দ্বারা যা লেখা হয় তাকে সংখ্যা বলে। যেমন:- ২৫, ৬৮১২, ২৫.৭৮ ইত্যাদি।
সংখ্যা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
দশটি অঙ্ক সহ আরও কতকগুলি চিহ্নের (যেমন দশমিক, বর্গ , বর্গমূল ইত্যাদি) সাহায্যে যা তৈরি হয়, তাকে সংখ্যা বলা হয়। উদাহরণ:- ৮৭, ৮৯.০২১৪৫ ইত্যাদি।